Vitamin D: যেসব ১০টি খাবার খেলে ঘাটতি দ্রুত পূরণ হবে
গবেষণায় দেখা গেছে, Vitamin D ঘাটতি হলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে অন্যতম হলো অটোইমিউন ডিজঅর্ডার। এছাড়া হাড় ও মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে। সাধারণত সূর্যের আলো থেকে প্রাকৃতিকভাবে Vitamin D পাওয়া গেলেও অনেক মানুষ নিয়মিত এই উৎস থেকে যথেষ্ট পরিমাণ Vitamin D গ্রহণ করতে পারেন না। তাই ভিটামিন ডির ঘাটতি মেটাতে বিভিন্ন খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
নীচে কিছু খাদ্য উপাদান নিয়ে আলোচনা করা হলো, যা ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণে সহায়ক হতে পারে:
Read More: হার্ট অ্যাটাক নাকি কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট, বুঝবেন যেভাবে
১. চর্বিযুক্ত মাছ
ভিটামিন ডির অন্যতম প্রাকৃতিক উৎস চর্বিযুক্ত মাছ, যা মানবদেহের Vitamin D ঘাটতি পূরণে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। স্যালমন, ম্যাক্রেল, সার্ডিনের মতো চর্বিযুক্ত মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে। প্রতিদিন বা সপ্তাহে অন্তত একবার এসব মাছ খেলে দেহে ভিটামিন ডি সরবরাহ করা সহজ হয়। চর্বিযুক্ত মাছে উপস্থিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডও হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। এছাড়া চর্বিযুক্ত মাছ কোলেস্টেরল কমাতে এবং হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কার্যকর।
- স্যালমন: প্রতি ১০০ গ্রাম স্যালমন মাছে প্রায় ৫২৬ IU Vitamin D থাকে, যা দৈনিক প্রয়োজনের একটি বড় অংশ পূরণ করতে সক্ষম।
- ম্যাকারেল: ম্যাক্রেল মাছে ৩৬০ IU ভিটামিন ডি পাওয়া যায়, যা শরীরে দ্রুত ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণ করে।
২. মাছের তেল
মাছের তেল, বিশেষ করে কড মাছের তেল, ভিটামিন ডির একটি চমৎকার উৎস হিসেবে পরিচিত। মাছের তেলে এমন কিছু উপাদান থাকে যা রিকেটস ও সোরাইসিসের মতো রোগ প্রতিরোধে কার্যকর। যাদের মাছ খাওয়ার অভ্যাস নেই, তারা কড লিভার তেল সাপ্লিমেন্ট আকারে গ্রহণ করতে পারেন। এটি Vitamin D ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে।
- কড লিভার তেল: প্রতি টেবিল চামচে প্রায় ১৩৬০ IU ভিটামিন ডি থাকে, যা রক্তে ভিটামিন ডি লেভেল বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩. ডিমের কুসুম
ডিম মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টির উৎস, বিশেষ করে এর কুসুমে ভিটামিন ডি উপস্থিত থাকে। সাধারণত একটি ডিমের কুসুমে প্রায় ৩৭ IU Vitamin D থাকে। যদিও এই পরিমাণ অন্যান্য উৎসের তুলনায় কম, তবে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি করে ডিম রাখলে ভিটামিন ডি ঘাটতির অনেকটাই পূরণ হয়। ডিমে উপস্থিত প্রোটিন, ভিটামিন বি১২, এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণও শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
- কিভাবে খাবেন: প্রতিদিন সকালের নাশতায় বা স্ন্যাক্স হিসেবে সিদ্ধ বা ভাজা ডিম খেতে পারেন, যা শরীরের শক্তি বাড়াতে এবং হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।
Read More: Aerobic exercise : অ্যারোবিক ব্যায়ামের এই উপকারিতাগুলো জানেন?
৪. টুনা
সামুদ্রিক মাছ টুনা ভিটামিন ডির অন্যতম একটি ভালো উৎস। সরাসরি টুনা মাছ পাওয়া সহজ না হলেও ক্যানজাত টুনা খাওয়া যায়, যা একইভাবে উপকারী। ক্যানজাত টুনা খাবার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে প্রায় ২৬৯ IU ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। এটি শরীরে ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণে সহায়ক। টুনা মাছের মধ্যে থাকা অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেলসমূহও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- টুনা স্যান্ডউইচ: ক্যানজাত টুনা দিয়ে সহজে স্যান্ডউইচ তৈরি করা যায়, যা স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।
৫. মাশরুম
মাশরুম হলো একমাত্র উদ্ভিজ্জ খাবার যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিটামিন ডি উপস্থিত থাকে। বিশেষ করে চাষ করা কিছু বিশেষ প্রজাতির মাশরুমে Vitamin D ২ বেশি মাত্রায় থাকে, যা শরীরে ভিটামিন ডির উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক। নিয়মিত মাশরুম খেলে শরীরে ভিটামিন ডির ঘাটতি মেটানো সহজ হয় এবং রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়ানো যায়।
- পোর্টোবেলো মাশরুম: সূর্যের আলোতে বাড়ানো পোর্টোবেলো মাশরুমে প্রায় ৪০০ IU পর্যন্ত ভিটামিন ডি থাকে।
৬. দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে সাধারণত ভিটামিন ডি কম থাকে। তবে বাজারে অনেক ব্র্যান্ড ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ দুধ সরবরাহ করে থাকে। প্রতিদিন এক গ্লাস ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ দুধ পান করলে বা দুগ্ধজাত খাবার যেমন পনির, দই খেলে Vitamin D ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।
- ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ দুধ: এক গ্লাসে প্রায় ১০০ IU ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
৭. ফোর্টিফাইড খাবার’
বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন সিরিয়াল, ওটমিল এবং কিছু ব্রেডে Vitamin D সমৃদ্ধ উপাদান যোগ করা হয়ে থাকে, যা ভিটামিন ডির ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে। এই ধরনের খাবার সাধারণত সকালের নাশতায় খাওয়া হয়, যা দিনের শুরুতেই শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে।
- ফোর্টিফাইড সিরিয়াল: প্রতিদিনের নাশতায় ফোর্টিফাইড সিরিয়াল যোগ করলে প্রায় ৫৪ IU ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
Read More: Heart Attack হবে কি না বলে দেবে Smartwatch! সেই তথ্য কি ঠিক?
৮. সয় দুধ
সয় দুধ প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ না হলেও বাজারে ফোর্টিফাইড সয় দুধ পাওয়া যায়, যা দুধের বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয়। যারা দুধ পান করতে পছন্দ করেন না, তাদের জন্য সয় দুধ একটি ভালো বিকল্প। এতে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনও বিদ্যমান, যা হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারী।
- ফোর্টিফাইড সয় দুধ: এক গ্লাসে প্রায় ১০০ IU ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
৯. কমলা জুস
কমলা জুস, বিশেষ করে ফোর্টিফাইড কমলা জুস, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। এই ধরনের জুস প্রতিদিন সকালে পান করলে শরীরে ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণে সহায়ক।
- ফোর্টিফাইড কমলা জুস: প্রতি এক গ্লাসে প্রায় ১৪০ IU ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
১০. গরুর কলিজা
গরুর কলিজায় ভিটামিন ডির পাশাপাশি ভিটামিন বি১২ ও আয়রন বিদ্যমান। গরুর কলিজা খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে ভিটামিন ডি এবং আয়রন সরবরাহ করা যায়।
- গরুর কলিজা: প্রতি ১০০ গ্রাম কলিজায় প্রায় ৪২ IU ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
Read More: ১০ মিনিট হাসলেই মিলবে অসাধারণ উপকারিতা!
উপসংহার
মানবদেহের জন্য ভিটামিন ডি অপরিহার্য, এবং এর ঘাটতি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। সূর্যের আলো ভিটামিন ডি পাওয়ার একটি প্রাকৃতিক উৎস হলেও অনেকেই নিয়মিত এই উৎস থেকে ভিটামিন ডি গ্রহণ করতে পারেন না। তাই খাদ্য তালিকায় কিছু ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার যুক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।