হার্ট অ্যাটাক নাকি কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট, বুঝবেন যেভাবে
বর্তমান যুগে, বিশেষ করে ৪০ বছর বয়সের আগে অনেকেই হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এই সমস্যা মূলত আধুনিক জীবনযাত্রা, অনিয়মিত খাদ্যাভাস এবং মানসিক চাপের ফলে দেখা দিচ্ছে। হার্ট অ্যাটাক নাকি কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট মতো বিষয়গুলো শোনায় খুব পরিচিত, কিন্তু এই দুটি অবস্থার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৭.৯ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হার্টের সমস্যার কারণে ঘটে, এবং এর মধ্যে অনেকেই তরুণ বয়সের। চলুন, বিস্তারিতভাবে জানি হার্ট অ্যাটাক ও কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মধ্যে পার্থক্য কী।
Aerobic exercise : অ্যারোবিক ব্যায়ামের এই উপকারিতাগুলো জানেন?
হার্ট অ্যাটাক কী?
হার্ট অ্যাটাক, যা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন নামেও পরিচিত, একটি রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা। যখন হার্টে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, তখন তাকে হার্ট অ্যাটাক বলা হয়। এই পরিস্থিতি সাধারণত তখন ঘটে যখন হার্টে রক্ত সরবরাহকারী ধমনী ব্লক হয়ে যায়, ফলে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত হার্টে পৌঁছাতে পারে না।
হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ:
- বুকে ব্যথা: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের প্রথম লক্ষণ হলো বুকে চাপ অনুভব করা। অনেকেই এটিকে জ্বালা বা ব্যথার অনুভূতি হিসাবে বর্ণনা করেন।
- বমি বমি ভাব: কিছু রোগী বমির অনুভূতি বা পেটের অসুস্থতা অনুভব করেন।
- ঘাম: আকস্মিকভাবে ঠাণ্ডা ঘাম হওয়া।
- শ্বাসকষ্ট: শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, যা কিছু ক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের কারণ:
হার্ট অ্যাটাকের প্রধান কারণ হলো হৃদপিণ্ডের রক্তনালির ব্লক হওয়া, যা সাধারণত আর্থ্রোসক্লেরোসিসের কারণে ঘটে। এই অবস্থায়, ধমনীতে চর্বি, কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য পদার্থ জমা হতে শুরু করে, যা রক্তের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী?
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলো একটি জরুরি অবস্থা যেখানে হৃদপিণ্ড হঠাৎ করে রক্ত পাম্প করা বন্ধ করে দেয়। এই অবস্থায়, মস্তিষ্ক এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রতঙ্গে অক্সিজেন পৌঁছানো বন্ধ হয়ে যায়, ফলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের উপসর্গ:
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া: রোগী হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
- সাড়া না দেওয়া: রোগী কথা বলা বা সাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
- অস্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস: শ্বাসের গতি অস্বাভাবিক হতে পারে, যেমন খুব দ্রুত বা খুব ধীর।
- মুখ নীল হয়ে যাওয়া: মুখ এবং ঠোঁটের রঙ নীল হয়ে যেতে পারে, যা অক্সিজেনের অভাব নির্দেশ করে।
- নাড়ি কম হওয়া: হৃৎপিণ্ডের ধাক্কা কমে যেতে পারে, যা বিপদ সংকেত।
Heart Attack হবে কি না বলে দেবে Smartwatch! সেই তথ্য কি ঠিক?
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ:
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে, যেমন:
- হার্টের জন্মগত সমস্যা: কিছু মানুষ জন্মগতভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
- হার্ট অ্যাটাক: হার্ট অ্যাটাক হলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- রক্তের ঘনত্ব: রক্তের ঘনত্ব বেশি হলে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়, যা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাক এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মধ্যে পার্থক্য
হার্ট অ্যাটাক এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট দেখতে প্রায় একরকম মনে হতে পারে, কিন্তু তাদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে:
১. কারণ:
- হার্ট অ্যাটাক: সাধারণত ধমনী ব্লক হওয়ায় ঘটে, যার ফলে হার্টে রক্তের সরবরাহ কমে যায়।
- কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট: হৃদপিণ্ডের কার্যক্রম হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে ঘটে।
২. উপসর্গ:
- হার্ট অ্যাটাক: বুকে ব্যথা, বমি, ঘাম, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি।
- কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট: অজ্ঞান হওয়া, সাড়া না দেওয়া, মুখ নীল হওয়া ইত্যাদি।
৩. চিকিৎসা:
- হার্ট অ্যাটাক: দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন, যেমন অ্যানজিওপ্লাস্টি বা স্টেন্টিং।
- কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট: CPR (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) এবং অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রয়োজন।
৪. সময়:
- হার্ট অ্যাটাক: হার্ট অ্যাটাক ঘটলে আক্রান্ত ব্যক্তি সচেতন থাকে এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকে।
- কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট: কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে ব্যক্তি দ্রুত অজ্ঞান হয়ে যায় এবং রক্তচাপ পড়তে থাকে।
প্রতিরোধ এবং যত্ন
জীবনযাত্রার পরিবর্তন:
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস: ফলমূল, সবজি, ওমেগা-৩ ফ্যাট, সম্পূর্ণ শস্য এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম: সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিটের জন্য ব্যায়াম করুন।
- মানসিক চাপ কমানো: যোগ, মেডিটেশন বা শিথিলতা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করুন।
১০ মিনিট হাসলেই মিলবে অসাধারণ উপকারিতা!
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার গুরুত্ব:
বয়স বাড়ার সাথে সাথে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা উচিত। বিশেষ করে হৃদরোগের জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পরীক্ষা করান।
উপসংহার
হার্ট অ্যাটাক এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট দুটি আলাদা চিকিৎসা সমস্যা, তবে উভয় ক্ষেত্রেই সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ৪০ বছর বয়সের আগে অনেকের হার্টের সমস্যা দেখা দিচ্ছে, যা আমাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তনের কারণে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব। সচেতনতা এবং প্রস্তুতি আমাদের জীবন রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে।